রমজান প্রায় শেষ হয়ে আচ্ছে ।
আমাদের পালনকর্তা কত আদরের সাথে বলেছেন:
“أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ গণনার কয়েকটি দিনই তো আছে” ।
এখন এই কয়েকটি দিন প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে ।
এই মোবারক মাসের বরকতের ফলে প্রায় প্রত্যেক মুসলমান, কারুর ঈমান
শক্তিশালী হোক বা দুর্বল হোক,
সবাই রোজা রেখেছে ।
রোজা একটা এমন এবাদত যা শুধু বান্দা এবং আল্লাহর মাঝে বিরাজ
করে ।
যদি কেও গোপনে খেয়ে ফেলে এবং কাও কে না বলে তবে লোকেরা তাকে
রোজাদারই মনে করবে ।
কিন্তু কোনো দুর্বলতম ঈমানের মোমিন বান্দাও এমনটা করে না কারণ
সে জানে যে রোজাটা শুদু মাত্র তার এবং আল্লাহর মাঝে এবং আল্লাহ তাকে সব সময় দেখতে ছেন
।
এমনি ভাবে ইফতারের সময় যদি কাওকে বলা হয় যে, ভাই ১৪ - ১৫
ঘন্টার রোজাটা রাখছো ২ - ৩ মিনিট পূর্বে ইফতার করলে কি মুশকিল । সে বলবে: " আল্লাহ
এবং তার রসূল (স)-এর হুকুম আছে যে সূর্যাস্তের পর রোজা ইফতার করা, তা না হলে রোজা
হবে না, রোজা ভেঙ্গে যাবে আর আমি আল্লাহর এই হুকুমের নাফরমানি করতে পারি
না " ।
রোজা রাখার পর দুর্বলতম ঈমানের বান্দারও ঈমান এতো শক্তিশালী
হয়ে যায় যে সে গোপনে খাওয়া বা ২ - ৩ মিনিট পূর্বে ইফতার করে না এবং রোজা সম্পর্কে আল্লাহ
ও রসূলের হুকুম মেনে চলে ...এক মিনিটের জন্যও না ফরমানি করে না ।
সুতরাং আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করা দরকার:
রোজা ছাড়া অন্যান্য বেপারে আল্লাহর নাফরমানি করতে আমরা এতো সাহসী
হয়ে যাই কেন !
রোজা সম্পর্কে আল্লাহ ও রসূল (স) যে হুকুম দিয়েছেন সেটা তো আমরা
মেনে চলি, এক মিনিটের
না ফরমানি করি না ।
অথচ রোজা ছাড়াও আমাদের উপর আল্লাহর বিভিন্য হুকুম ও নির্দেশাবলী
ফরজ আছে, যে গুলিতে আমরা
প্রায় না ফরমানি করতে এক মিন্টেরও দেরি করি না ।
রোজা রাখাটা যে আল্লাহর হুকুম সেটা তো আমরা সবাই মেনে নেই কিন্তু:
- কি হারাম থেকে বাঁচা এবং হালাল অর্জন করা আল্লাহর হুকুম নেই ?
- কি পুরুষের জন্য পাঁচ বার জামাতের সাথে নামাজ পড়া আল্লাহর হুকুম নেই ?
- কি ঠিক হিসাব মোতাবেক জাকাত ও ফিতরানা দেওয়া আল্লাহর হুকুম নেই ?
- কি ধনী ব্যক্তির জন্য হজ করাটা আল্লাহর হুকুম নেই ?
- কি ঠিক হিসাব মোতাবেক জাকাত ও ফিতরানা দেওয়া আল্লাহর হুকুম নেই ?
- কি পিতামাতা এবং আত্মীয়দের প্রতি করুণাময় এবং যত্নশীল হওয়া (صلہ رحمی)আল্লাহর হুকুম নেই?
- কি নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া এবং তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করা আল্লাহর হুকুম নেই ? ইত্যাদি ইত্যাদি ....
কি আল্লাহর ও রসূলের অনুগত হওয়া (أَطِيعُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ
ﷺ) আল্লাহর
হুকুম নেই ?
... যেটা ছেড়ে আমরা ইমাম,
পীর,
মাশায়েখ ইত্যাদিদের অনুগত হয়েগেছি এবং বিভিন্য ফিরকায়ে বিভক্ত
হয়ে গেছি
রোজা থাকা অবস্থা তো আমরা সব নিষেধাজ্ঞা (محرمات) থেকে বিরত থাকি
কিন্তু এগুলো ছাড়াও আল্লাহ তা'লা অনেক কিছু
হারাম করিয়েছেন যার বেশিরভাগই আমরা এড়িয়ে চলি না:
--কি মিথ্যা বলাটা হারাম নয়?
--কি মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াতা হারাম নয় ?
--কি অসদাচরণ,
অপব্যবহার, কুপরিচালনা ইত্যাদি
হারাম নয় ?
--কি গীবত,
প্রতারণা,
ঘৃণা ইত্যাদি হারাম করা হয় নি?
--কি আত্মীয়তা পরিত্যাগ করা হারাম করা হয় নি?
--কি আল্লাহর হক এবং তার সৃষ্টির হক আদায় না করা হারাম নয় ?
ইত্যাদি ইত্যাদি ....
তারপর সব চেয়ে বোরো হছে শিরক ... কি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক
করা হারাম নয় ?
আজ কত নামধরি মুসলমানেরা আছে যারা সব রকমের বিধি নিষেধ মেনে
রোজা তো রাখে, কিন্তু
শীরকের অভিশাপে লিপ্ত
আছে !
কোন মুসলমান জানে না যে:
إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّـهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿١١٦﴾ سورة النساء
“ নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়”।
হায় হায়রে ! যদি
এই সব মুসলমানেরা বুঝতো এবং রমজান শেষ হওয়ার পূর্বেই অনুতপ্ত হতো এবং সব ধরণের শীরকীয়া
কাজকর্ম থেকে সব সময়ের জন্য বিরত থাকতো ।
যে ভাবে আমরা রমজানে
আল্লাহর আদেশ অনুসরণ করি এবং নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলি, রমজানের পরও আমাদেরকে সারা বছর সেই উদ্দীপনার সাথে
আল্লাহ সুবহানাহু ও তা'লার আদেশগুলো মেনে
চলা এবং নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলা উচিত
... তখনই আল্লাহ তা'লা যে উদ্দেশে রমজানের রোজা আমাদের উপর ফরজ করেছেন
" لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ যেন তোমরা পরহেযগারী
অর্জন করতে পার " পরিপূর্ণ হবে ।
অবশ্য আমরা সারা জীবনের
জন্য মুত্তাকী ও পরহেজগার হয়ে যাবো ।
অবশ্য আমরা সারা জীবন
কোরান ও সুন্নাতের মোতাবেক জীবন যাপন করতে পারবো ।
অবশ্য আমরা সারা জীবনের জন্য আল্লাহর পথ অনুসরণের তরিকা এবং
পাপ পরিহারের সৌজন্যতা শিখতে পারবো, ইন শা আল্লাহ ।